পুকুর-জলাশয় থেকে পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির ছোট ছোট মাছ হারিয়ে যাচ্ছে। জলাশয়ে বছরের অধিকাংশ সময় পানি না থাকা এবং প্রজনন মৌসুমে পানিপ্রবাহ কমে যাওয়া এর অন্যতম কারণ। এছাড়া মানবসৃষ্ট কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে জমিতে রাসায়নিক সার ও অপরিকল্পিত মৎস্য আহরণ, প্রজনন মৌসুমে প্রজনন সক্ষম মাছ ও পোনা ধরা, কারেন্ট জালের ব্যবহার, মাছের আবাসস্থল ধ্বংস করার কারণে ধীরে ধীরে বিলুপ্তি পথে দেশীয় বিভিন্ন প্রজাতির ছোট ছোট মাছ।
এক সময় কুমিল্লা জেলার বুড়িচং-ব্রাহ্মণপাড়া উপজেলার বিভিন্ন খাল-বিল, পুকুর-জলাশয় ও নদী থেকে বিভিন্ন প্রজাতির প্রচুর মাছ পাওয়া যেতো। বিলুপ্তির ঝুঁকিতে থাকা এসব মাছ এখন পাওয়াই কষ্টকর। উপজেলার খাল-বিলে এবং জলাশয় পুকুরে বিভিন্ন প্রজাতির মাছ শিকার করতো জেলেরা আর এসব ছোট মাছের নানা রকম নাম ছিল।
এর মধ্যে রয়েছে চাপিলা, বৈচা, চান্দা, চাঁদা গুড়া, গোল চাঁদা, গুলশা, পাবদা, দেশি পুঁটি, সরপুঁটি, তিত পুঁটি, বাইলা, মেনি অথবা (ভেদা), শিং, কৈ, টাকি, শোল, কাঁচকি, মলা, ঢেলা, তাঁরাবাইম, চৌককুনী, চিংড়ি গুড়া, সেললোশ, খৈলশা, ছোট টেংরা, বড় টেংরা, বজুরি, ছোটচিংড়ি, বাতাশি, বড় বাইন, তারা বাইন, শালবাইন, চিত্রা বাইন, টেমবইছা, মাগুর, দাঁড়িয়া গুড়া, টেম, বইছা, বুচ্ছাসহ নাম না জানা অনেক প্রজাতির দেশি মাছ।
এক যুগ আগেও এ অঞ্চলে বিভিন্ন প্রজাতির ছোট-বড় দেশীয় মাছ পাওয়া গেলেও বর্তমানে এসব মাছের অনেক প্রজাতিই বিলুপ্তির পথে। এ উপজেলার নদীর শাখা, গোমতী, গুংগুর নদীসহ ছোট-বড় বিভিন্ন খাল-বিল মাছের প্রধান উৎস। এসব জলাশয়ের মাছ এলাকার চাহিদা মিটিয়ে জেলা শহরে বিক্রি করা হত।
সরেজমিনে গিয়ে আলাপকালে জানা যায়, বর্ষা মৌসুমে মাছগুলো ডিম ছাড়ে। ওই সময় এক শ্রেণির মৎস্যশিকারি এগুলো ধরে ফেলে। এতে দেশীয় প্রজাতির মাছের প্রজনন হয় না। তাছাড়া কতিপয় মাছ চাষি বিভিন্ন দিঘি, পুকুর ইত্যাদি জলাশয় ইজারা নিয়ে বা ফসলি জমিতে মাছের ঘের তৈরি করে। এসব জলাশয় ও ঘের বিভিন্ন রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার করে দেশীয় প্রজাতির মাছ ধ্বংস করে ফেলছে।
বুড়িচং উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা জানান, আগে দেশীয় প্রজাতির যেসব মাছ দেখা যেত, তার অনেকটা এখন বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
উপজেলার আনন্দপুরের মৎস্যচাষি মোহাম্মদ হোসেন, পশু ডাক্তার মো. কামাল হোসেন, গ্রাম্য চিকিৎসক মো. লোকমান হোসেন, ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিনসহ অনেকে জানান, এখন আর আগের মত খাল-বিল জলাশয়ে আশানুরূপ মাছ মিলে না। এইতো কয়েক বছর আগের কথা।
উপজেলার হাটে, মাঠে, বাজারে, সকাল বেলা বিভিন্ন জাতের ছোট বড় মাছ নিয়ে আসা হতো বিক্রি করার জন্য। তখন ক্রেতার খুব ভিড় ছিল কিন্তু মাছের দাম ছিল খুবই সস্তা। তখন বাজার থেকে ক্রেতারা ৫০/১০০ টাকার ছোট মাছ কিনলে একটা পরিবার অনায়াসে খেতে পারতো একদিন অথবা দুদিন। আর তখন মাছ ছিল ভরপুর আর এখন কাচকি মাছের কেজি ৪৫০ থেকে ৫০০ টাকা, টাকি মাছের কেজি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা, বাইম মাছ ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা, পুঁটি মাছ ২৫০ টাকা থেকে ৩০০ টাকা, টেংরা মাছ ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকা, শিং মাছ ৯০০ থেকে ১২০০ টাকা, মাগুর মাছ ৮০০ থেকে ৯৫০ টাকা দিয়ে কিনতে হয়।
মাছ ব্যবসায়ী শানু মিয়া দেশি প্রজাতির মাছ রক্ষায় সরকারি তৎপরতা হতাশাজনক মন্তব্য করে বলেন, নদী-খালবিল জলাশয় এবং পুকুর ভরাট হওয়ায় মাছের বিচরণ ও প্রজনন স্থান সংকুচিত হচ্ছে। প্রজনন স্থানে মা মাছের ডিম অভয়ারণ্য করে নির্দিষ্ট সময় মাছ ধরা বন্ধ রাখতে হবে, বর্ষাকালে উজানে পোনা ছাড়তে হবে। তাহলে হয়তো আগের মত ছোট জাতের মাছে বাজার সয়লাব হবে।
টিএইচ